পাবলিকের পশ্চাৎপদ চিন্তাধারা কোত্থেকে আসে?
লিখেছেনঃ সাম্য রাইয়ান
এর কারন একটাই৷ তাদের সকল পশ্চাৎপদ চিন্তাধারা ‘ভিত্তিহীন’ নয়৷ এগুলোর ‘ভিত্তি’ রয়েছে৷ যে ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে তারা জাজমেন্টাল বক্তব্য প্রদান করেন৷ এই ‘ভিত্তি’ কখনো আইন, কখনো প্রথা, কখনো অন্য কিছু৷ আর এই পশ্চাৎপদ চিন্তার ভিত্তি তৈরি করে দেয় রাষ্ট্র৷
যেমন ধরুন, কোনো নারী ধর্ষিত হলে পাবলিক দোষীর শাস্তি নিয়ে যতোটা না সোচ্চার হয় তার অধিক আলোচনা করে (প্রশ্ন তোলে) ভিক্টিমের চরিত্র নিয়ে৷ পাবলিকের এহেন ‘ভিক্টিম ব্লেইমিং’ এর ভিত্তি হলো আইন৷ বাঙলাদেশে ধর্ষণ মামলার ক্ষেত্রে প্রমাণ আইনের ১৫৫ নং অনুচ্ছেদের একটি উপধারা অনুযায়ী, আদালতে ভিক্টিমের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ রয়েছে৷ এই আইন মোতাবেক, একজন পুরুষের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এলে অভিযোগকারী নারীর ‘চরিত্র’ বিচার করে তার ওপর ধর্ষণ হওয়া যে ‘ন্যায্য’ তা প্রমাণ করার সুযোগ থাকে! এটাই হলো পাবলিকের ভিক্টিম ব্লেইমিং এর ভিত্তি৷ এরকম আরো অনেক ‘ভিত্তি’র উদাহরণ দেয়া যায়৷ আপনারা একটু মাথা খাটালেই অনেক ‘ভিত্তি’ আবিষ্কার করে ফেলতে পারবেন৷
বাঙলাদেশের মতো গুণ্ডাতান্ত্রিক রাষ্ট্র করে কি, নিজস্বার্থে এইসব ‘ভিত্তি’ তৈরি করে এবং পেট্রোনাইজ করে৷ আর এইসকল ভিত্তির সাথে পাবলিক এটাচমেন্ট তৈরির কাজটা করে মিডিয়া৷ আপনি খেয়াল করবেন, পাবলিকের ভিক্টিম ব্লেইমিং এর ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সমূহ উপাদান সাপ্লাই দেয় মিডিয়া৷ কারণ মিডিয়া যখন সোসাইটির ওয়াচডগ না হয়ে রাষ্ট্রের ল্যাপডগ (কোলের কুত্তা) হয়ে যায়, তখন মিডিয়ার একমাত্র লক্ষ্য হয়ে ওঠে গুণ্ডাতন্ত্রের পক্ষে সম্মতি উৎপাদন৷ আর সে তার সকল উপায়গুলো সেই কাজেই ব্যবহার করে৷ ফলস্বরূপ আমরা দেখি, মিডিয়া আর সংবাদ পরিবেশন করে না বরং সে নিজেই জাজমেন্টাল হয়ে ওঠে এবং পাবলিককে উস্কাতে থাকে৷ আর এই উস্কানির ফল আমরা দেখি অনলাইনে পাবলিক কমেন্টে কিংবা গলির মুখে চায়ের দোকানে৷
ফলে, এহেন পশ্চাৎপদ চিন্তাধারার জন্য আপনি যদি পাবলিককেই দায়ী কিংবা ভিলেন হিসেবে চিহ্নিত করেন, সেটাও ভুল হবে৷ কেননা এটা ভুলে গেলে চলবে না যে, গুণ্ডাতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পাবলিক নিজেই ভিক্টিম৷ এইদশা থেকে উত্তরণ চাইলে এর উৎসমূল ধ্বংস করতে হবে, যেখান থেকে পাবলিকের পশ্চাৎপদ চিন্তাধারা জন্ম নেয়৷
Comments
Post a Comment