আজ বাজার থেকে দুটো বড় ইলিশ নিলাম

লিখেছেন- চতুর্বেদী প্রহর


আজ বাজার থেকে দুটো বড় ইলিশ নিলাম। ইলিশ নিয়ে আমার কয়েকটা স্মৃতি বিজড়িত ঘটনা আছে, যা আমি আজীবন ভুলতে পারবো না।কেন জানি ঘটনা গুলো আজ চোখের সামনে অত্যন্ত জীবন্ত হয়ে ভাসছে। ১৯৯৭ কিংবা ৯৮ র দিকে আমার বড় দিদি আগ্রাবাদ চৌমুহনীতে বাসা বাড়িতে থাকতো। আমরা থাকতাম রাউজানে।সেসময় সারাদেশে বন্যার কারণে চট্টগ্রাম থেকে কোন জেলায় মাছ রপ্তানি করার সুযোগ ছিলো না।ইলিশের প্রতি বরাবরই আমার দুর্বলতা ছিলো।

১ কেজি দেড় কেজি মাছও ৫০ টাকা ৩০ টাকা দিয়ে বিক্রি হচ্ছিলো।সেখান থেকে দুটো মাছ কিনে আমার দিদি আমাদের জন্য রান্না করে রাউজানে পাঠিয়েছিলো।আগেই বলে রাখি আমার দিদির হাতের রান্না আমার নিকট খাওয়ার মধ্যে সব থেকে সুস্বাদু হয়।রান্না করা মাছ টিফিন ক্যারিতে আসার পর ,আমার যেন আর তর সয়লো না।গরম করার সুযোগ না দিয়ে মাকে বললাম আমার এখনই লাগবে।অনেকটা বাধ্য হয়ে মা গরম না করেই টিফিন ক্যারি থেকে চামচ দিয়ে ইলিশ মাছ তুলে দিলো। তুলে দিবার সে দৃশ্য যেন পৃথিবীর সকল শিল্পে তার কাছে তুচ্ছ মনে হলো। ঐ দৃশ্য যেন আমার নিকট আজও অমর।

বাঙালীরা যে ভোজন রসিক তার আরো একটা বড় উদাহরণ হলো অনেক গুলো মাছ থাকা শর্তেও জাতীয় মাছটা হলো ইলিশ।

সৌভাগ্যবশতঃ আমার স্ত্রীর বাপের বাড়িও এমন জায়গায় যেখানে অথিতি অ্যাপায়নে আর কিছু থাক না থাক ইলিশটা থাকে। বিয়ের ছয়মাস পর আমি যখন শ্বশুড় বাড়ি গেলাম অনেক গুলো নিমন্ত্রণ অপেক্ষা করছিলো আমার জন্য।প্রথম যেদিন গিয়ে পৌঁছালাম সেদিন রাতেই শ্বশুড় ঘরে খাবারটা হলো।পরেরদিন দুপুরে আমার ছোট কাকা শ্বশুড় আমায় নিমন্ত্রণ করলো।

অনেক কিছু আয়োজনের মধ্যে ইলিশটাও ছিলো,তাও আমি শালিকাকে দুষ্টুমি করে বললাম লইঠ্যা মাছ হলে আরো ভালো হয়।সঙ্গত কারণে কথাটি আমার  কাকি শ্বাশুড়ি শুনে পেলল।যথারীতি কাকা শ্বশুড়কে কথাটি জানিয়ে দিলো,আগেই বলে রাখি আমি আসলেই ভোজন রসিক মানুষ।

রাতে আবার নিমন্ত্রণ আছে আমার জেট্টসের বাসায়।এরই মধ্যে আমার শ্বশুড় আরেকটি ইলিশ মাছ নিয়ে হাজির।আমি যে রাতে খেতে পারবো না, এর জন্য বিকেলে রাস্তার পরিবর্তে ইলিশ আর ইলিশ মাছের ডিম আমাকে ভাজা করে দিলো। অতিরিক্ত খেলে আমার আসলে ফুডপয়জিং এর সমস্যা হয়। তার উপর শ্বশুড়ের এমন ভালোবাসা উপেক্ষা করার শক্তি আমার  নেই। আমাকে খেতে দিয়ে বারান্দায় পায়চারি করতে লাগলো আর মাঝে মাঝে উঁকি মেরে দেখছে আমি খাচ্ছি কিনা!

এ দৃশ্য এই মানবজীবনে আমি হয়তো কোনদিনও ভুলতে পারবো না। ভালো থাকুক ভালোবাসা গুলো,আজীবন বেঁচে থাকুক স্মৃতির পাতায়। দুর্লভ স্মৃতিগুলো দুর্লভ সময় আর মানুষের সনে।


Comments

Popular posts from this blog

কুড়িগ্রামে সুবিমল মিশ্র, সন্দীপ দত্ত ও শাহেদ শাফায়েতের স্মরণসভা অনুষ্ঠিত

মিজান খন্দকার সাহিত্য পুরস্কার’ পাচ্ছেন কবি শামীম সৈকত

মোকলেছুর রহমানের নতুন কবিতার বই ‘সব বৃক্ষ মহোদয় হয় না’