গান (মেধা) ছিনতাই চেষ্টার তিব্র প্রতিবাদঃ-
আশির দশকে ভাওয়াইয়া যুবরাজ কছিম উদ্দীন রচিত ও সুরারোপিত মা'কে নিয়ে বিখ্যাত ভাওয়াইয়া গান "মাও বড় ধন সোনা'রে" গত চল্লিশ বছরের অধিক সময় ধরে রেডিও, টেলিভিশন ও মঞ্চে দেশবিদেশের বহু স্বনামধন্য সঙ্গীতশিল্পীগণ গেয়ে আসছেন। ১৯৯২ সালের ২২ আগষ্ট ভাওয়াইয়া যুবরাজ কছিম উদ্দীনের মৃত্যুর অনেক পরে ইন্টারনেট ভিত্তিক বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আবিস্কৃত হলে এসব মাধ্যমেও বহু স্বনামধন্য সঙ্গীতশিল্পী বিখ্যাত এ গানটি এখনো গেয়ে আসছেন। "মাও বড় ধন সোনা'রে" হৃদয়স্পর্শী এ ভাওয়াইয়া গানটি নিছক কোনো সাধারণ গান নয়। এ গানটি ভাওয়াইয়া যুবরাজ কছিম উদ্দীনের জীবনকাহিনীর অংশ। তাঁর জীবনে ঘটে যওয়া ঘটনার আলোকে তিনি (কছিম উদ্দীন) গানটি রচনা ও সুরারোপ করেছেন। কছিম উদ্দীন রচিত ও সুরারোপিত এমন আরও অনেক গান আছে যা তাঁর দুঃখে ভরা ঘটনাবহুল জীবনের একেকটি খণ্ড কাহিনি। ভাওয়াইয়া যুবরাজ কছিম উদ্দীনের জ্যেষ্ঠ সন্তান হিসেবে সে গানগুলো শুনলে এখনো আমার বাবার জন্য মন কাঁদে, ভীষণ আফসোস হয়। কছিম উদ্দীন রচিত ও সুরারোপিত "মাও বড় ধন সোনা'রে" গানটি এরকমই একটি গান। তিনি তাঁর জীবনের যে বাস্তব প্রেক্ষাপট ও উপলব্ধি থেকে গানটি রচনা করেছেন তার উপর তাঁর জন্মভিটা তিস্তায় একটি ডকুমেন্টারি তৈরি হয়েছে যা খুব শীঘ্রই সবার উদ্দেশ্যে উপস্থাপন করা হবে।
কিন্তু অতিসম্প্রতি কে বা কাহারা কছিম উদ্দীনের লেখা ও সুরারোপিত "মাও বড় ধন সোনা'রে" গানটি রচনা সিরাজ উদ্দীন উল্লেখ করে শিল্পী উম্মে কুলসুম মুনিরা'র কণ্ঠে রেকর্ড ও ভিডিও করান এবং খন্দকার মহম্মদ আলী সম্রাট ত্বরিতগতিতে তাঁর নিজের ইউটিউব চ্যানেল " ICT Samrat Folk Song " এ আপলোড করেন ( লিংক- https://youtu.be/iv_RIoyyL80)। অথচ খন্দকার মহম্মদ আলী সম্রাট নিজেও জানেন গানটির গীতিকার সুরকার ভাওয়াইয়া যুবরাজ কছিম উদ্দীন।
সিরাজ উদ্দিন সম্প্রতি অর্থাৎ চলতি বছর ৯ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন। সিরাজ উদ্দিন নিজেও একজন গীতিকার সুরকার ও কণ্ঠশিল্পী এবং তিনি রংপুর বেতারে "উপ মুখ্য সঙ্গীত প্রযোজক" হিসেবে জীবনের প্রায় শেষ সময় পর্যন্ত চাকুরী করেন। তিনি (সিরাজ উদ্দিন) জীবিতাবস্থায় গত প্রায় চল্লিশ বছর ধরে বেতার, টিভি, মঞ্চ সহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কছিম উদ্দীন রচিত "মাও বড় ধন সোনা'রে" গানটি বহু শিল্পীর কণ্ঠে শুনেছেন। গানটি তাঁর (সিরাজ উদ্দিনের) লেখা হলে অবশ্যই তিনি নিজেই প্রতিবাদ করতেন। এমনকি সিরাজ উদ্দিন রংপুর বেতারের 'উপ মুখ্য সঙ্গীত প্রযোজক' হিসেবে চাকুরিকালীন সময়ে অনেক শিল্পীর কণ্ঠে কছিম উদ্দীন রচিত ও সুরারোপিত "মাও বড় ধন সোনা'রে" গানটি নিজহাতে অনেকবার রেকর্ডও করেছেন কছিম উদ্দীনের নামে। কিন্তু সিরাজ উদ্দিন নিজে কখনো বলেননি গানটি তাঁর নিজের লেখা।
সিরাজ উদ্দীন মৃত্যুর পূর্বে বিভিন্ন সময় নিজের প্রতিষ্ঠিত সংগঠন "গীদালের আখড়া'র ফেসবুক পেইজ এবং ইউটিউব চ্যানেলে লাইভে এসেছিলেন অনেকবার। সিরাজ উদ্দিনের মৃত্যুর পরপরই যারা তাঁর (সিরাজ উদ্দিনের) রচিত বলে "মাও বড় ধন সোনা'রে " গানটি ছিনতাইয়ের হীন চষ্টা করছেন তাঁরা যদি বদমাশ না-হয়ে সত হতেন তাহলে অবশ্যই যেকোনো লাইভ অনুষ্ঠানে অন-রেকর্ড সিরাজ উদ্দিনকে "মাও বড় ধন সোনা'রে" গানটির বিষয়ে প্রশ্ন করতেন এবং তা জনগণ তাঁর (সিরাজ উদ্দিনের) নিজ মুখেই শুনতে পেতেন। অথচ তা-না করে সিরাজ উদ্দিনের মৃত্যুর পরপরই "মাও বড়ো ধন সোনা'রে" গানটি সিরাজ উদ্দীনের লেখা বলে যারা জঘন্য মিথ্যাচার ও বদমাশি করছেন তাঁরা কি মরহুম সিরাজ উদ্দিনের সম্মান বৃদ্ধি করছেন নাকি তাঁকে পাপের ভাগি করছেন?
আমি এই গান ডাকাতি বা ছিনতাইয়ের হীন চেষ্টার তিব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি।
সকল সত ও প্রকৃত গীতিকার সুরকার কণ্ঠশিল্পী এবং বিজ্ঞ ভাওয়াইয়া দর্শক-শ্রোতাদের কাছে বিনীত আহবান আপনারা এই শিল্পী গীতিকার গবেষক নামধারী ভণ্ড মেধা-চোরদের প্রতিহত করুন। কোনো শিল্পীর আখড়ায় (সংগঠনে) এদের স্থান দেবেন না। দেশের কোনো শিল্পীর আখড়া (সংগঠন) যেন চোরের আখড়া না হয়। লোকসঙ্গীত অঙ্গনের এসব মুষ্টিমেয় কিছু শিল্পী গীতিকার গবেষক নামধারী ভণ্ড বদমাশদের হাত থকে আমাদের ঐতিহ্য লোকসঙ্গীত বাঁচান, প্রকৃত গীতিকার সুরকার শিল্পী বাঁচান, ভাওয়াইয়ার বিকৃতি ঠেকান।
Comments
Post a Comment