থিয়েটার জগতের পুরোধা ব্যক্তি আশীষ খন্দকারের জন্মদিন আজ


মঞ্চ ও টেলিভিশন নাটকের শক্তিমান অভিনেতা আশীষ খন্দকারের জন্মদিন আজ৷ ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দের ১৩ই সেপ্টেম্বর তিনি বাংলাদেশের গাইবান্ধা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন৷ পিতা মরহুম খন্দকার আজিজুর রহমান ছিলেন গাইবান্ধা পৌরসভার প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান, মাতা মরহুম নূরজাহান বেগম কেটি (আপা) ছিলেন গাইবান্ধা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক৷


আশীষ খন্দকার অভিনয় বিষয়ে গ্রাজুয়েট করেছেন দিল্লির National School Of Drama Institute (NSD-এনএসডি) থেকে। তার খুব কাছের বন্ধুরা বলিউডে অভিনয় করেন৷


মঞ্চনাটকে নির্দেশনা ও অভিনয় করা তাঁর নেশা৷ তবে ডিরেক্টরদের অনুরোধে মাঝে মাঝে টেলিভিশন নাটক ও সিনেমায় অভিনয় করে থাকেন। তাঁর অভিনীত প্রথম সিনেমা সেলিম আল দীনের গল্প অবলম্বনে মোরশেদুল ইসলাম পরিচালিত ‘চাকা’৷ যা জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পায়৷ এরপর তিনি নির্মাণ করেন চলচ্চিত্র ‘বাথান’ ও ‘তার কোনো নাম নেই’৷


অনিমেষ আইচ যখন হুমায়ূন আহমেদের মিসির আলী সিরিজের ‘নিষাদ’ নিয়ে টেলিফিল্ম বানাচ্ছিলেন, তখন মিসির আলী চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন আশীষ খন্দকার৷


তিনি স্পেস এণ্ড এক্টিং রিসার্চ সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন আজ থেকে ৩০ বছর আগে৷ মঞ্চে তার নির্দেশিত নাটকের সংখ্যা অসংখ্য৷ তিনি জন্ম দিয়েছেন নাটকের নতুন ফর্ম ‘পরিবেশ থিয়েটার’৷ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর সহায়তায় ১৯৯১ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর প্রত্ন নামের প্রথম পরিবেশ থিয়েটারটি পরিবেশিত হয়। এর নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় ছিলেন বাংলাদেশে পরিবেশ থিয়েটারের পুরোধা ব্যক্তি আশীষ খন্দকার। তাঁর কয়েকটি পরিবেশ থিয়েটারের নাম, ইটাবাড়ি, কারখানা, মোহাম্মদ আমিন, আকালী বাতাস, চন্দ্রবিন্দু, ডেট লাইন জগন্নাথ হল, মৃত্তিকার কম্পাস, মবিল, সেই সমতটে এই জনপদে, মেশিন ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য৷ সম্প্রতি তাঁর নতুন কাজ ‘দুই আগন্তুক ও করবী গাছ’ বিপুল দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে৷

সাধারণত তিনি থিয়েটার নিয়েই ব্যস্ত থাকেন,টিভি নাটকে উনার অভিনয় দেখা ভাগ্যের ব্যাপার। অভিনয় ক্ষমতা অনেক বেশি হলেও ব্যক্তিগত জীবনে উদাসীনতা কারনেই তিনি সবসময় আড়ালে থেকে গেছেন। একই ঈদে উনার দুইটি নাটক প্রচার হওয়া তো অবাক করার মতই ব্যাপার, যেখানে নাটকই করেছেন হাতেগোনা। একবার ঈদে সেইরকম ব্যাপার ই ঘটেছে। রাফাত মজুমদার রিংকুর 'বোধ' নাটকে অভিনয়ের সুবাদে তিনি এখন দর্শকদের প্রিয় মুখ। একজন মানুষের সত্তা, বোধের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। একই চরিত্র না হলেও কাছাকাছি চরিত্রে অভিনয় করেছেন দীপঙ্কর দীপনের 'ছায়া'তে,  স্বভাবতই এখানেও দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন।


অসম্ভব ভালো অভিনয় করেও আন্ডাররেটেড অভিনেতা আশীষ খন্দকার ৷
আশীষ খন্দকার মূলত মঞ্চ নাটকের নিয়মিত অভিনেতা ৷ টিভি নাটকে খুব কম অভিনয় করেন আবার যখন করে তখন ভিন্নধর্মী চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে অভিনয় করে ৷ ২০১৭ সালে আয়নাবাজি অরিজিন্যাল সিরিজের গৌতম কৈরি'র পরিচালনায় ‘শেষটা একটু অন্যরকম’ নাটকে আশিষ খন্দকার অভিনয় করেন ওই বছর অত্যন্ত প্রশংসিত হয় নাটক ‘শেষটা একটু অন্যরকম’৷ নাটক প্রশংসিত হওয়ার পাশাপাশি অভিনেতা হিসেবে আশীষ খন্দকার প্রশংসায় প্রশংসিত হন৷ ‘শেষটা একটু অন্যরকম’ নাটকে আশীষ খন্দকারের সাথে অভিনয় করেন জাকিয়া বারী মম৷


আশীষ খন্দকারকে  টিভি নাটক দেখা গেছে ‘বোধ’ নাটকে ও ‘ছায়া’, ‘জোয়ার’, ‘আপনাকে নিতে এসেছি স্যার’, ‘দ্য লাস্ট পোস্ট অফিস’ সহ আরো অনেক শর্টফিল্মে৷ এছাড়া অভিনয় করেছেন আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের গল্প ‘মিলির হাতে স্টেনগান’ গল্প অবলম্বনে নাটক ‘এই সময়’, ধারাবাহিক নাটক ‘এই সময়ে সেই সময়ের মানুষেরা’, ‘লাকী ভাই লিমিটেড’, ‘অদ্ভূতুরে বইঘর’ সহ আরো কয়েকটি ধারাবাহিক নাটকে৷ অভিনয়, ডায়লগ, ডেলভারী লুক, এক্সপ্রেশন সব কিছুতেই তিনি সেরা৷ মেধাবী অভিনেতা হওয়ার সত্বেও টিভি নাটকে একদম কম দেখা যায় আশীষ খন্দকারকে৷


চলতি বছর ফিচার ফিল্ম ‘সাহসিকা’তে উকিল চরিত্রে অভিনয় করেন আশীষ খন্দকার৷ আশীষ খন্দকারের অভিনয় ছিলো ফিল্মটির অন্যতম প্রাপ্তি৷ অভিনয়ের দিক থেকে তিনি এই ফিল্মকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যান, যা দর্শক মহলে অত্যন্ত প্রশংসিত হয়৷


আগামীতে তাঁর অভিনীত অনেকগুলো সিনেমা মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে৷ এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য, ঘুন্টিঘর, অ্যাডভেঞ্চার সুন্দরবন, ফ্রম বাংলাদেশ, আগামীকাল, হায়দার ইত্যাদি৷


পথিক নবীর কণ্ঠে ‘তোরা কে কে যাবি খেলিতে জলকেলি খেলা’ গানটি একসময় তুখোর জনপ্রিয়তা অর্জন করে৷ এই গানটির রচয়িতা আশীষ খন্দকার৷


তাঁর কাছে দর্শকদের একটাই চাওয়া, সামনের দিনগুলোতে টিভি নাটকে নিয়মিত অভিনয় করবেন তিনি৷ জন্মদিনে তাঁর সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করি আমরা সকলে৷




Comments

Popular posts from this blog

কুড়িগ্রামে সুবিমল মিশ্র, সন্দীপ দত্ত ও শাহেদ শাফায়েতের স্মরণসভা অনুষ্ঠিত

মিজান খন্দকার সাহিত্য পুরস্কার’ পাচ্ছেন কবি শামীম সৈকত

মোকলেছুর রহমানের নতুন কবিতার বই ‘সব বৃক্ষ মহোদয় হয় না’